somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হার্ট কই?

০৬ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাড়ে আটটায় ক্লাস । যথারীতি আধ ঘন্টা দেরী করে ছুটতে ছুটতে ওয়ার্ডে ঢুকলাম। মেডিসিন ওয়ার্ড। প্রতিদিনকার মতো একই দৃশ্য। একটা রোগীর বেডের পাশে অর্ধগোলক সৃষ্টি করে দুই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। আরেক পাশে চেয়ারে বসে স্যার পড়াচ্ছেন। ওমা!- আরিফ স্যার! কপালে খারাবি আছে নিশ্চিত।
ডাক্তারদের টেবিলে স্টুডেন্টদের সবার ব্যাগ জড়ো করে রাখা। পা টিপে টিপে আমার ব্যাগটা ওখানে রেখে লাইনের পিছনে চুপটি করে সেধিয়ে গেলাম জয় আর আসিফের মাঝে। কিছুটা লুকিয়ে থাকা অবস্থানে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- স্যার যেন দেখতে না পান। পরে দেখতে পেলে বলতে পারব, 'আমি তো শুরু থেকেই আছি স্যার।'
লাভ হলো না। স্যার দেখতে পেলেন- ' এই ছেলে, এদিকে এসো।'
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। চেহারায় নিরীহ গোবেচারা টাইপের একটা ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম। এই ভাবটা আমার চেহারায় ফোটে ভাল। অকনক টিচারই ধোঁকা খেয়ে যান। ভাবেন, আহা! ক্লাসের সবচেয়ে নিরীহ, ভদ্র ছেলেটি! অনেক টিচার মুখ ফুটে তা বলেছেনও। কিন্তু এবার খুব একটা কাজ হলো না। চেহারা আর কন্ঠ দুটোতেই কাঠিন্য ফুটিয়ে স্যার জিজ্ঞেস করলেন- 'কয়টা বাজে?'
'স্যার?' বিনয়ে বিগলিত আমি; তবে প্রশ্নটার উত্তর দিতে মোটেও উৎসাহী নই।
'দেরী কেন?'
' স্যার, অ্যালার্ম ঠিকই দিয়েছিলাম স্যার। কিন্তু স্যার, শুনতে পাই নাই। আমার আজকাল মাঝে মাঝেই এরকম হচ্ছে স্যার। কেন যে শুনতে পাই না!'
'অ্যাপ্রোন কই?'
'স্যার, পরেই বের হয়েছিলাম। হোস্টেলের গেটে স্যার... কাক... স্যার..। পরে রুমে রেখে আসতে হয়েছে।'
ঘটনা সত্য না। ডাহা মিথ্যা। শীতকাল ছিল। নতুন সোয়েটার কিনেছি্ সবাইকে সেটা দেখাতে হবে না! তাই ওর উপর দিয়ে অ্যাপ্রোন পরার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না।
এর পর স্যার কী নিয়ে চার্জ করবেন, তা বোধহয় ভেবে পেলেন না। - 'আচ্ছা, রোগীর সামনে এসো। দেখে বলো, এর কী ধরণের মার্মার আছে।' দেখে বলো মানে হচ্ছে, স্টেথো দিয়ে শুনে বলো। মার্মার (murmur) হচ্ছে অ্যাবনরমাল হার্ট সাউন্ড। হৃৎপিন্ড রক্ত পাম্প করার সময় স্বাভাবিক যে শব্দ হয়, তার ব্যতিক্রম কোন শব্দ।
থার্ড ইয়ারের শেষ দিক তখন। নরমাল হার্ট সাউন্ডেরই ভাব ঠিকমতো বুঝি না, ফার্স্ট না সেকেন্ড বলতে পারি না। তায় , অ্যাবনরমাল, তার উপর কোন ধরণের! স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, 'পারব না' বলে পার পাওয়া যাবে না। চূড়ান্ত অপমান করে ছাড়বেন। আল্লাহর নাম নিয়ে এগোলাম। রোগীর বুকের বাম দিকে যেসব জায়গায় স্টেথো রেখে সাউন্ড শুনতে হয়, সেভাবে শোনার চেষ্টা করলাম। যথারীতি বুঝতে পারলাম না কিছুই। কয়েক মিনিট মনোযোগের (!) সাথে চেষ্টা করে কান থেকে স্টেথো সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। পাশে স্নিগ্ধা দাঁড়ানো। ও তো একটু আওয়াজ দিলেও পারে। তা না- দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
'হ্যাঁ বলো, কী মার্মার পেলে?' স্যারের প্রশ্ন। চশমার উপর দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে।
কী বলবো?- কিছুই তো বুঝি নাই। যা থাকে কপালে! আস্তে করে উত্তরটা ডেলিভারি করার সময় স্যারের মুখভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষ্য করার চেষ্টা করলাম, ' আর্লি ডায়াস্টলিক মার্মার স্যার।'
ফিক করে হাসির আওয়াজ হলো। সারাহ। তবে কি আমি ভুল বলেছি? স্যারের মুখে কোন ভাবান্তর দেখছি না। দেবব্রতর বিকট হাসির লো-ভয়েস সংস্করণও শোনা গেল।
'তুমি শিওর?' স্যার জিজ্ঞেস করলেন।
নিশ্চয়ই ভুল বলেছি। ওরা যখন হাসছে। কিন্তু আমার তখন আর মাত্র এক ধরণের মার্মারের নাম মনে পড়ছে। আল্লাহ ভরসা, সেটাই ট্রাই করলাম, 'প্যানসিস্টোলিকও হতে পারে স্যার।'
এবার সবারই কম-বেশি দাঁত দেখা গেল। সিরিয়াস ফার্ষ্ট বয় রাকিবও দেখি হাসছে নিঃশব্দে। আরে, ভুল তো হতেই পারে! তোমরা না হয় আধঘন্টা আগে থেকে ক্লাস করে নামটা জেনে বসে আছো। এতে হাসির কী আছে?
স্যার এবার রোগীর একটা এক্স-রে প্লেট নিয়ে ভিই-বক্সে লাগিয়ে পেছনের আলোটা জ্বালিয়ে দিলেন। এবার সবার হাসিই সশব্দ হয়ে উঠলো। স্যারও আর গম্ভীর হয়ে থাকতে পারলেন না। টের পেলাম, আমার দুই কান দিয়েও গরম হাওয়া বের হচ্ছে। না দেখেও বুঝতে পারছি, গালও লাল হয়ে উঠেছে।
এই রোগীর বাম পাশে মার্মার তো দূরের কথা, কেউ নরমাল সাউন্ডও খুঁজে পাবে না। কারণ, রোগীর বুকের এক্স-রে ফিল্ম স্পষ্টই জানিয়ে দিচ্ছে, এর হার্ট ডান দিকে।
(পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না। পৃথিবীর সব মানুষের হৃৎপিন্ড বামদিকে থাকে না। অনেকে জন্ম নেয় ডানদিকে হৃৎপিন্ড নিয়েই এবং এ নিয়েই বেঁচে থাকতে পারে বহু বছর। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় - 'ডেক্সট্রোকার্ডিয়া'।)

...................................................................................................
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×